মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:৪৯ অপরাহ্ন

তাসকিনের বোলিং ঝড়ে ও তামিমের ব্যাটিং তান্ডবে সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ

মুজিবুর রহমান বাবু, ই-কন্ঠটোয়েন্টিফোর ডটকম ॥ শাবাশ বাংলাদেশ, কথায় আছে, ‘ত্যাগেই খুশি, ত্যাগেই মুক্তি।’ দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৯ উইকেটে উড়িয়ে দিয়ে সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ দল যেন দুটিই পেল। এবার দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাদেরই মাটিতে ওয়ানডে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে আরেকটি ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। ২৩ মার্চ বুধবার ৯ উইকেটে তৃতীয় ওয়ানডে জিতেছে টাইগাররা। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে মাত্র ষষ্ঠ দল হিসেবে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের অবিশ্বাস্য কীর্তি টাইগারদের। সাকিব আল হাসান ত্যাগ স্বীকার করলেন। তাতে ইতিহাস গড়ার খুশি মিলল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রথমবার সিরিজে হারানোর মুক্তিও মিলল। আর তা বাংলাদেশ পেসার তাসকিন আহমেদেরে বিধ্বংসী বোলিংয়ের পর অধিনায়ক ও ওপেনার তামিম ইকবালের অসাধারণ ব্যাটিংয়ে সম্ভব হলো।

বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জিতে তাক লাগিয়ে দেয় বাংলাদেশ। এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সেই আত্মবিশ্বাস পুঁজি করে ২০ বছর ধরে প্রোটিয়া ভূমিতে পরাজয়ের দুঃসহ স্মৃতি বদলানোর প্রত্যয় ছিল ক্রিকেটারদের। সেঞ্চুরিয়নে প্রথম ম্যাচেই ৩৮ রানে জিতে তা বাস্তব করে টাইগাররা। বাংলাদেশ পেসার তাসকিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে প্রথমবার বিদেশের মাটিতে ৫ উইকেট শিকার করে ব্যাটিং দ্যুতি ছড়ালেন। তাতে দক্ষিণ আফ্রিকা ১৫৪ রানেই গুটিয়ে গেল। সেখানেই আসলে বাংলাদেশের জয়ের ভীত গড়া হয়ে গেল। এরপর ব্যাটিংয়ে তামিম (৮৭*) ব্যাটিং তান্ডব দেখালে সহজেই তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে জিতল বাংলাদেশ। ১ উইকেট হারিয়ে ২৬.৩ ওভারে ১৫৬ রান করে জিতে বাংলাদেশ। তাতে করে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ জিতে নিল বাংলাদেশ। ম্যাচ সেরার সাথে তিন ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরাও হন তাসকিন।

প্রথম ওয়ানডেতে ৩৮ রানে জিতে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়ে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৭ উইকেটে হেরে সিরিজে ১-১ সমতা আসে। তৃতীয় ওয়ানডেটি ‘ফাইনাল’ ম্যাচই হয়ে দাড়ায়। যে দল জিতবে, সিরিজ তাদের হয়ে যাবে। সিরিজের শিরোপা তাদের ঘরে যাবে। এমন ম্যাচে পাত্তাই পেল না দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে জিতে ইতিহাসও গড়ে ফেলল বাংলাদেশ।

অপরাজিত ৮৭ রানের ইনিংস খেলেন তামিম ইকবাল

সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্ট পার্ক স্টেডিয়ামে টস জিতে দক্ষিণ আফ্রিকা। আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। তখন একটু ভয় জাগে। এরআগে প্রথম ওয়ানডেতে যে বাংলাদেশ আগে ব্যাটিং করে ৩১৪ রান করে। এবার যদি প্রোটিয়ারা বড় স্কোর গড়ে ফেলে, তাহলে সর্বনাশ! সেই আশাতেই আগে ব্যাটিং করে স্বাগতিকরা। কিন্তু তাসকিন এমনই বোলিং করেন, তাক লাগিয়ে দেন। দক্ষিণ আফ্রিকার একজন ব্যাটসম্যানও হাফসেঞ্চুরি করতে পারেননি। ওপেনার জানেমান মালান যে ৩৯ রান করেন, সেটিই দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর হয়ে থাকে। ৩৭ ওভারে ১৫৪ রান করে অলআউট হওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকাও যেন বুঝে যায়, হার হচ্ছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা যে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর থাকেন।

তাসকিনের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ৮৩ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকা, তখন মনে হয় ১৫০ রানও করতে পারবেনা। কিন্তু শেষে কেশভ মহারাজ (২৮) কিছুটা দলকে এগিয়ে নিয়ে গেলে ১৫৪ রান করতে পারে প্রোটিয়ারা।

তবে ৩৭ ওভারের বেশি খেলতে পারেনি। অলআউট হয়ে যায়। কাইল ভেরেইন, মালান, ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস, ডেভিড মিলার ও কাগিসো রাবাদাকে আউট করেন তাসকিন। ২০১৪ সালে অভিষেক ওয়ানডেতে ৫ উইকেট শিকারের পর প্রায় ৮ বছর পর আবার ৫ উইকেট শিকার করেন তাসকিন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকার করেন। এমনই আত্মবিশ্বাস দেখান বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা, দুই ওপেনার তামিম ও লিটন কুমার দাস মিলেই ১২৭ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। তামিম ৫২ বলে হাফসেঞ্চুরি করেন। যে কাগিসো রাবাদা দ্বিতীয় ম্যাচে বোলিংয়ে কাঁপান, তার এক ওভারেই ৪ চার হাকান তামিম। গতবছর জুলাইয়ের পর আবার বড় রানের দেখা পান। হাফসেঞ্চুরি করেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনেকটা রান খড়ায় ভুগছিলেন। ছন্দে ফেরেন তামিম। একটা সময় মনে হয় তামিম ও লিটন মিলেই ম্যাচ জিতিয়ে দেবেন।

তামিম একদিকে রান তুলতে থাকেন। আরেকদিকে লিটন উইকেট আঁকড়ে থাকেন। দুইজন মিলে শতরানের জুটিও গড়েন। যা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের ওপেনিংয়ে সেরা জুটি। তাসকিনের এই বোলিংয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে সবচেয়ে কম রানের স্কোর করে দক্ষিণ আফ্রিকা। এরআগে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে সবচেয়ে কম ১৬২ রান করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এবার এরচেয়েও কম করল। সাকিবও ২ উইকেট শিকার করে নিলেন। আর তাতে করে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা জয়ের আত্মবিশ্বাস যেন পেয়ে গেল।
২০১৫ সালে দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ, এবার দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথমবার সিরিজে জিতে ইতিহাস গড়ল টাইগাররা

যখন দলের স্কোরে ১২৭ রান হয়, তখন হাফসেঞ্চুরি থেকে আর ২ রান দুরে থাকতে আউট হয়ে যান লিটন (৪৮)। ওপেনিং জুটি ভেঙ্গে যায়। তবে এরপর আর কোন উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। তামিম (৮২ বলে অপরাজিত ৮৭ রান) ও সাকিব (১৮*) মিলে ম্যাচ জিতিয়ে দিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এরআগেও ২০১৫ সালে চট্টগ্রামে ৯ উইকেটে জিতেছিল বাংলাদেশ। এবারও ৯ উইকেটে জিতেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করল বাংলাদেশ। তবে সেই জয়কেও হার মানাল। সেবার ৮৩ বল বাকি থাকতে জিতেছিল টাইগাররা। এবার ১৪১ বল বাকি থাকতে জিতল বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। এবার দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথমবার সিরিজে জিতে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ।

স্কোর : দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংস- ১৫৪/১০; ৩৭ ওভার (জানেমান ৩৯, মহারাজ ২৮, প্রিটোরিয়াস ২০; তাসকিন ৫/৩৫, সাকিব ২/২৪)।
বাংলাদেশ ইনিংস- ১৫৬/১; ২৬.৩ ওভার (তামিম ৮৭*, লিটন ৪৮; সাকিব ১৮*; মহারাজ ১/৩৬)
ফল : বাংলাদেশ ৯ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ : ৩ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যাচসেরা : তাসকিন আহমেদ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com